book excerptise:   a book unexamined is wasting trees

pUrNendu patrir shreShTha kabitA

pUrNendu patrI

patrI, pUrNendu [পূর্ণেন্দু পত্রী];

pUrNendu patrir shreShTha kabitA [পূর্ণেন্দু পত্রীর শ্রেষ্ঠ কবিতা]

de's publishing দে’জ পাবলিশিং, 1993/2009, 199 pages

ISBN 8170793351

topics: |  poetry | bengali | anthology | single-author


pUrNendu patrI is one of my favourite modern poets (along with premendra mitra), but his poems are often hard to locate.

পূর্ণেন্দু পত্রী (pUrNendu patrI, 1933–1997), was at once a poet as well as an artist, filmmaker and short story writer. A student of the Indian Art college (did not finish his degree), he started his career as a commercial artist, with close links to the Communist Party. In the 1950s, his poems and writings started appearing in several magazines. His first volume of poetry, এক মুঠো রোদ (ek muTho rod) was published from a press owned by his uncle, in 1951. In 1958 he brought out his first novel, দাঁড়ের ময়না _dnARer maynA_, which received critical acclaim and an award. In 1965, he started making films. The 1972 film স্ত্রীর পত্র strIr patra (based on a story by rabindranAth) was a notable work and attracted international attention.

Like Arun Kolatkar, he was also noted for his book covers - he executed the cover artwork for more than a hundred books.

However it is as a poet that he is mainly known to the bAnglA literature lover.

Selections in shreShTha kabitA

This volume of his "best" poems contains his own selections, initially made in 1989, with new writings and expansions in the revised editions of 1985 and 1993. The poems here span the following works:

Notable among the omissions are the five volumes of "conversational
poetry", কথোপকথন (kathopakathan), a dialogue between the lovers
shubhankar and nandini, which are rather experimental, but very
powerful and deserve space in any collection of his poetic oeuvre.



purnendu patri




Excerpts



বৃক্ষের ভাগ্যকে ঈর্ষা করি ; পুর্ণেন্দু পত্রী

		শব্দের বিছানা shabder bichhAnA 1975 p.30

বৃক্ষের ভাগ্যকে ঈর্ষা করি।
নিজের বেদনা থেকে নিজেই ফোটায় পুস্পদল।
নিজের কস্তুরী গন্ধে নিজেই বিহ্বল।
বিদীর্ণ বল্কলে বাজে বসন্তের বাঁশরী বারংবার
আত্মজ কুসুমগুলি সহস্র চুম্বনচিহ্নে অলংকৃত করে ওষ্ঠতল।

আমি একা ফুটিতে পারি না।
আমি একা ফোটাতে পারি না।
রক্তের বিষাদ থেকে একটি আরক্তিম কুসুমও।
আমাকে বৃক্ষের ভাগ্য তুমি দিতে পারো।

বহুজন্ম বসন্তের অম্লান মঞ্জুরী ফুটে আছো।
নয়নের পথে দীর্ঘ ছায়াময় বনবীথিতল
ওষ্ঠের পল্লব জুড়ে পুস্প বিচ্ছুরন।
আমাকে বৃক্ষের ভাগ্য তুমি দিতে পারো।

তুমি পারো করতলে তুলে নিতে আমার বিষাদ
ভিক্ষাপাত্র ভরে দিতে পারো তুমি অমর সম্ভারে
সর্বাঙ্গ সাজিয়ে আছো চন্দ্রালোকে, চন্দনের ক্ষেত।
আমার উদগত অশ্রু অভ্যথর্না করে নিতে
পারো না কি তোমার উদ্যানে?

মোহিনীরা স্বভাবে নির্মম।
আর যারা ভালোবাসে
তারা শুধু নিজেদের আত্মার ক্রন্দনে ক্লিষ্ট হয়।


অনেককেই তো অনেক দিলে : পূর্ণেন্দু পত্রী

 		(from শব্দের বিছানা shabder bichhAnA 1975)  p.41

আমি ছাড়া অনেককেই তো অনেক দিলে।
এর আকাশে ওর আকাশে
ওষ্ঠপুটের অনেক পাখি উড়িয়ে দিলে
পায়রাকে ধান খুঁটতে দিলে খোয়াই জুড়ে
বুকের দুটো পর্দাঢাকা জানলা খুলে
কতজনকে হাত-ডোবানো বৃষ্টি দিলে।
কত মুখের রোদের রেখা মুছিয়ে দিলে নীল কমলে।


আমি ছাড়া অনেককেই তো অনেক দিলে।
চায়ের কাপে মিষ্টি দিলে হাসির থেকে
নকশাকাটা কাঁচের গ্লাসে সরবতে সুখ মিশিয়ে দিলে।
নখের আঁচড় কাটতে দিলে ডালিমবনে
দাঁতের ফাঁকে লাল সুপুরি ভাঙতে দিলে।

আমি ছাড়া অনেককেই তো অনেক দিলে।
একটা জিনিস দাওনি কেবল কাউকে তুমি
আলমারিটার ঝুলন-চাবি।

শূন্যতাকে রঙীন করার সাম্পু সাবান
সায়া শাড়ীর ভাঁজের নিচে
একটা ছোটো কৌটো আছে।
তার ভিতের ভোমরা থাকে।

সে ভোমরাটি সকল জানে
কোন হাসিতে রক্ত ঝরে ঠিক অবিকল হাসির মতো
সে ভোমরাটি সকল জানে
কোন রুমালে কান্না এবং কোন আঁচলে বুকের ক্ষত
দেয়ালজুড়ে বিকট ছাড়া ভাবছো বুঝি অন্য কারো?
কার ছায়াটি কিরূপ গাঢ় সে ভোমরাটি সকল জানে।

আমার কিছু লিখতে হবে
লিখতে গেলে ভোমরাটি চাই।
তোমার ঘরের আলমারিটার ঝুলন-চাবি
আমায় দেবে?


যে টেলিফোন আসার কথা : পুর্ণেন্দু পত্রী

		তুমি এলে সূর্যোদয় হয় tumi ele sUrJoday hay  1976 p.46

যে টেলিফোন আসার কথা সে টেলিফোন আসেনি।
প্রতীক্ষাতে প্রতীক্ষাতে
সূর্য ডোবে রক্তপাতে
সব নিভিয়ে একলা আকাশ নিজের শূন্য বিছানাতে।
একান্তে যার হাসির কথা হাসেনি।
যে টেলিফোন আসার কথা আসেনি।

অপেক্ষমান বুকের ভিতর কাঁসরঘন্টা শাখেঁর উলু
একশ বনের বাতাস এসে একটা গাছে হুলুস্থুলু
আজ বুঝি তার ইচ্ছে আছে
ডাকবে আলিঙ্গনের কাছে
দীঘির পাড়ে হারিয়ে যেতে সাঁতার জলের মত্ত নাচে।
এখনো কি ডাকার সাজে সাজেনি?
যে টেলিফোন বাজার কথা বাজেনি।

তৃষ্ণা যেন জলের ফোঁটা বাড়তে বাড়তে বৃষ্টি বাদল
তৃষ্ণা যেন ধূপের কাঠি গন্ধে আঁকে সুখের আদল
খাঁ খাঁ মনের সবটা খালি
মরা নদীর চড়ার বালি
অথচ ঘর দুয়ার জুড়ে তৃষ্ণা বাজায় করতালি
প্রতীক্ষা তাই প্রহরবিহীন
আজীবন ও সর্বজনীন
সরোবর তো সবার বুকেই, পদ্ম কেবল পর্দানশীন
স্বপ্নকে দেয় সর্বশরীর, সমক্ষে সে ভাসে না।
যে টেলিফোন আসার কথা সচরাচর আসে না।


তুমি এলে

			 p.55


তুমি এলে সূর্যোদয় হয়।
পাখি জাগে সমুদ্রের ঘাটে
গন্ধের বাসরঘর জেগে ওঠে উদাসীন ঘাসের প্রান্তরে
হাড়ের শুষ্কতা, ভাঙা হাটে।

তুমি এলে চাঁদ ওঠে চোখে
সুস্বাদু ফলের মতো পেকে পরিপূর্ণ হয়
ইচ্ছা, প্রলোভন,
ঘরের দেয়াল ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ে দুর
ভ্রমনের বন।

তুমি এলে মেঘ বৃষ্টি সবই মুল্যবান।
আমাদের কাঠের চেয়ার
যেদিকে শহর নেই, শ্রাবণের মেঘমল্লার
মাতাল নৌকার মতো ভেসে যায় ভবিষ্যৎহীন।
পৃথিবী পুরনো হয়
পৃথিবীর ছাইগাদা, ছন্নছাড়া দৃশ্যের বিভুঁয়ে
শতাব্দীর শোক-তাপ জ্বর-জালা ছুঁয়ে
রয়ে যাই আমরা নবীন।



সিঁড়ি : পূর্ণেন্দু পত্রী

 		তুমি এলে সূর্যোদয় হয় tumi ele sUrJoday hay  1976 p.55

কত রকম সিঁড়ি আছে ওঠার এবং নামার
চলতে চলতে থামার।
সরল সিঁড়ি শীতল সিঁড়ি
পদোন্নতির পিছল সিঁড়ি
অন্ধ এবং বন্ধ সিঁড়ি
কদম ফুলের গন্ধ-সিঁড়ি
ওঠার এবং নামার
চলতে চলতে থামার।
কত রকম সিঁড়ির ধাপে কত রকম জল
পা পিছলে অধঃপতন
ভাসতে পারো মাছের মতন
ডুব সাঁতারে মুঠোয় পেলে সঠিক ফলাফল।
কত রকম জলের ভিতর কত রকম মাছ
চুনো পুঁটি রাঘব বোয়াল যার যে রকম নাচ।
পেট চিরলে আংটি কারো
কারো শুধু আঁশ
দীর্ঘতর ফুসফুসে কার দীর্ঘশ্বাস।

সিঁড়ির নীচে জল এবং সিঁড়ির উপর ছাদ
মেঘও পাবে মানিক পাবে
বজ্রধ্বনির খানিক পাবে
পুড়তে চাইলে রোদ
জ্যোৎস্না থেকে চাইতে পার সার্থকতাবোধ।

অনেকরকম সিঁড়ি আছে ওঠা নামা হাঁটার
উর্ধ্বে অভিষেকের তোরণ
নিচের ঝোপটি কাঁটার।


কেবল আমি হাত বাড়ালেই : পূর্ণেন্দু পত্রী

 		(from তুমি এলে সূর্যোদয় হয় tumi ele sUrJoday hay 1976) p.56

হাওয়া তোমার আঁচল নিয়ে ধিঙ্গীনাচন করলো খেলা
সকাল বিকেল সন্ধেবেলা
চোখের খিদের আশ মেটালো লম্পটে রোদ রাস্তা ঘাটে
যখন হাঁটো সঙ্গে হাঁটে
বনের পথে হাঁটলে যখন কাঁটাগাছে টানলে কাপড়
চ্যাংড়া ছেঁড়ার ফাজলামিকে ভেবেছিলাম মারবে থাপড়।
একটা নদীর লক্ষটা হাত, ভাসিয়ে দিলে সর্বশরীর
লুটপাটেতে ছিনিয়ে নিলে ওষ্ঠপুটের হাসির জরির
জেল্লাজলুস।
কেবল আমি হাত বাড়ালেই, মাত্র আমার পাঁচটা আঙুল
তোমার মহাভারত কলুষ।

রক্তে মাংসে মনুষ্যজীব, সেই দোষেতেই এমন কাঙাল।
কিন্তু তোমার খবর নিতে আমার কাছেই আসবে ছুটে
অনন্তকাল ।


আরশিতে সর্বদা এক উজ্জল রমনী : পুর্নেন্দু পত্রী

 		(from তুমি এলে সূর্যোদয় হয় tumi ele sUrJoday hay 1976) p.58

আরশিতে সর্বদা এক উজ্জল রমণী বসে থাকে।
তার কোনো পরিচয়, পাসপোর্ট, বাড়ির ঠিকানা
মানুষ পায়নি হাত পেতে।

অনুসন্ধানের লোভে মুলত সর্বতোভাবে তাকে পাবে বলে
অনেক মোটর গাড়ি ছুটে গেছে পাহাড়ের ঢালু পথ চিরে
অনেক মোটর গাড়ি চুরমার ভেঙে গেছে নীল সিন্ধুতীরে
তারও আগে ধ্বসে গেছে শতাধিক প্রাসাদের সমৃদ্ধ খিলান
হাজার জাহাজ ডুবি হয়ে গেছে হোমারের হলুদ পাতায়।

আরশির ভিতরে বসে সে রমণী ভ্রু-ভঙ্গিতে আলপনা আঁকে
কর্পুর জলের মতো স্নিগ্ধ চোখে হেসে বা না হেসে
নানান রঙ্গীন উলে বুনে যায় বন উপবন

বেড়াবার উপত্যকা, জড়িয়ে ধরার যোগ্য কুসুমিত গাছ
লোভী মাছরাঙা চায় যতটুকু জল আর মাছ
যতটুকু জ্যোৎস্না পেলে মানুষ সন্তুষ্ট হয় স্নানে।

স্নানের ঘাটে সে নিজে কিন্তু তারও স্নান চাই বলে
অনেক সুইমিং পুল কাপেট বিছানো বেডরুমে
অনেক সুগন্ধী ফ্ল্যাট পার্ক স্ট্রীটে জুহুর তল্লাটে
ডানলোপিলোর ঢেউ ডাবলবেডের সুখী খাটে
জোনাকী যেভাবে মেশে অন্ধকারে সর্বস্ব হারিয়ে
প্রভাতে সন্ধ্যায় তারা সেইভাবে মিলেমিশে হাঁটে।

বহু জল ঘাঁটাঘাঁটি স্নান বা সাঁতার দিতে দিতে
মানুষেরা একদিন অনুভব করে আচম্বিতে
যে ছিল সে চলে গেছে নিজের উজ্জল আরশিতে।

প্রাকৃতিক বনগন্ধ, মেঘমালা, নক্ষত্রের থালা
কিংবা এই ছ’রকম ঋতুর প্রভাবে
এত নষ্ট হয়ে তবু মানুষ এখনও ভাবে সুনিশ্চিত তাকে কাছে পাবে
কাল কিংবা অন্য কোন শতাব্দীর গোধুলি লগনে
কলকাতায়, কানাডায় অথবা লন্ডনে ।


প্রশ্ন : পূর্ণেন্দু পত্রী

 		(from তুমি এলে সূর্যোদয় হয় tumi ele sUrJoday hay 1976) p.61

ছটাক খানেক বুকে,
একটা গোটা আকাশ এবং
জলের স্থলের গা ভর্তি রং
সব পড়েছে ঝুঁকে।
কাকে কোথায় রাখি?
বুকের মধ্যে হেসে উঠল
শেকল-পরা পাখি।



হে সময় অশ্বারোহী হও (he samay asvArohI hao, 1979)


সরোদ বাজাতে জানলে (sarod bAjAte jAnle): পুর্ণেন্দু পত্রী :

	   	(from হে সময় অশ্বারোহী হও he samay asvArohI hao 1979) p.96
		first line: AmAr eman kichhu duHkha Achhe JAr nAm tilak kAmod

আমার এমন কিছু দুঃখ আছে যার নাম তিলক কামোদ
এমন কিছু স্মৃতি যা সিন্ধুভৈরবী
জয়জয়ন্তীর মতো বহু ক্ষত রয়ে গেছে ভিতর দেয়ালে
কিছু কিচু অভিমান
ইমনকল্যাণ।
সরোদ বাজাতে জানলে বড় ভালো হতো।
পুরুষ কিভাবে কাঁদে সেই শুধু জানে।

কার্পেটে সাজানো প্রিয় অন্তঃপুরে ঢুকে গেছে জল।
মুহুর্মুহু নৌকাডুবি, ভেসে যায় বিরুদ্ধ নোঙর।
পৃথিবীর যাবতীয় প্রেমিকের সপ্তডিঙা ডুবেছে যেখানে
সেখানে নারীর মতো পদ্ম ফুটে থাকে।
জল হাসে, জল তার চুড়িপরা হাতে,
নর্তকীর মতো নেচে ঘুরে ঘুরে ঘাগরার ছোবলে
সব কিছু কেড়ে নেয়, কেড়ে নিয়ে ফের ভরে দেয়
বাসি হয়ে যাওয়া বুকে পদ্মগন্ধ, প্রকাশ্য উদ্যন।
এই অপরূপ ধ্বংস, মরচে-পড়া ঘরে দোরে চাঁপা এই চুনকাম
দরবারী কানাড়া এরই নাম?

সরোদ কাজাতে জানলে বড় ভালো হতো।
পুরুষ কীভাবে বাঁচে সেই শুধু জানে।


মাঝে মাঝে লোডশেডিং : পূর্ণেন্দু পত্রী

	   	(from হে সময় অশ্বারোহী হও he samay asvArohI hao 1979) p.96

মাঝে মাঝে লোডশেডিং হোক।
আকাশে জ্বলুক শুধু ঈশ্বরের সাতকোটি চোখ
বাকী সব আলকাতরা মাখুক।
আমরা নিমগ্ন হয়ে নিজস্ব চশমায় আর দেখি না কিছুই
সকলে যা দেখে তাই দেখি।
আকাশের রঙ তাই হয়ে গেছে চিরকালে নীল।
বাতাস কি শাড়ি পরে কারো জানা নেই।

মাঝে মাঝে লোডশেডিং হোক।
সাদা মোমবাতি জ্বেলে
তোমাকে সম্পূর্ণ করে দেখি।
নারীকে বাহান্ন তীর্থ বলেছে শুনেছি এক কবি।
আমি তার গর্ভগৃহ, সরু সিড়ি, সোনার আসন
চন্দনবটিতে থাকে কতটা চন্দন
দেখে গুনে গুনে মেপে দেখে
তবেই পাতাবো মৌরীফুল।



স্রোতস্বিনী আছে, সেতু নেই : পূর্ণেন্দু পত্রী

	   	(from হে সময় অশ্বারোহী হও he samay asvArohI hao 1979) p.99

তুমি বললে, রৌদ্র যাও, রৌদ্রে তো গেলাম
তুমি বললে, অগ্নিকুণ্ড জ্বালো, জ্বালালাম।
সমস্ত জমানো সুখ-তুমি বললে, বেচে দেওয়া ভালো
ডেকেছি নীলাম।
তবু আমি একা।
আমাকে করেছ তুমি একা।
একাকিত্বটুকুতেও ভেঙে চুরে শত টুকরো করে
বীজ বপনের মতো ছড়িয়ে দিয়েছ জলে-স্থলে।
তুমি বলেছিলে বলে সাজসজ্জা ছেড়েছি, ছুঁড়েছি।
যে অরণ্য দেখিয়েছ, তারই ডাল কেটেছি, খুঁড়েছি।
যখনই পেতেছ হাত দিয়েছি উপুড় করে প্রাণ
তবু আমি একা।
তবুও আমার কেউ নও তুমি
আমিও তোমার কেউ নই।
আমাদের অভ্যন্তরে স্রোতস্বিনী আছে, সেতু নেই।


সেই সবও তুমি : পূর্ণেন্দু পত্রী

	   	(from হে সময় অশ্বারোহী হও he samay asvArohI hao 1979) p.101
	তোমাকেই দৃশ্য মনে হয়।
	তোমার ভিতরে সব দৃশ্য ঢুকে গেছে।
	কাচের আলমারি যেন, থাকে থাকে, পরতে পরতে
	শরতের, হেমন্তের, বসন্তের শাড়ি গয়না দুল,
	নদীর নবীন বাঁকা, বৃষ্টির নুপুর, জল, জলদ উদ্ভিদ।

	সাঁচীস্তুপে, কোনারকে যায় যারা, গিয়ে ফিরে আসে
	দুধ জ্বাল দিয়ে দিয়ে ক্ষীর করা স্বাদ জিভে নিয়ে
	তোমার ভিতরে সেই ভাস্কর্যেরও লাবণ্য রয়েছে।
	কোন্‌খানে আছে?
	চুলে না গ্রীবায়, নাকি স্তনে?

	হাজারিবাগের গাঢ় জঙ্গলের গন্ধ পাই তোমার জঙ্ঘায়।
	ভয়াবহ খাদ থেকে নাচের মাদল, বাঁশী ডাকে।
	বহুদূর ভেসে যেতে যতখানি ঝর্নাজল লাগে
	তাও আছে, কোনখানে আছে?
	চোখে, না চিবুকে?

	দুমকায় তোমারই মতো একটি পাহাড়ী টিলা
	মেঘের আয়নায় মুখ রেখে
	খোঁপায় গুজছিল লাল গোধূলির ফুল।
	তুমি কালএমন তাকালে
	মনে হলো বীরভুমের দিগন্তের দাউ দাউ পলাশ।
	জয়পুরের জালি কাটা ঝুল-বারান্দার মতো সমৃদ্ধ খিলান,
	তাও আছে। কোন্‌খানে আছে?
	ভূরুতে, না ঠোঁটে?

	জলপাইগুড়ির কোনো ছাদ থেকে কাঞ্চনজঙঘার
	যতটুকু আলো, ওড়না, নীলরশ্মি
	সেই সবও তুমি।


একমুঠো জোনাকী : পুর্ণেন্দু পত্রী

	   	(from হে সময় অশ্বারোহী হও he samay asvArohI hao 1979) p.104

একমুঠো জোনাকীর আলো নিয়ে
		ফাঁকা মাঠে ম্যাজিক দেখাচ্ছে অন্ধকার।
একমুঠো জোনাকীর আলো পেয়ে
		এক একটা যুবক হয়ে যাচ্ছে জলটুঙি পাহাড়
যুবতীরা সুবর্ণরেখা।
সাপুড়ের ঝাঁপি খুলতেই বেরিয়ে পড়ল একমুঠো জোনাকী
পুজো সংখ্যা খুলতেই বেরিয়ে পড়ল একমুঠো জোনাকী।
একমুঠো জোনাকীর আলো নিয়ে
		ফাঁকা মাঠে ম্যাজিক দেখাচ্ছে অন্ধকার।
ময়দানের মঞ্চে একমুঠো জোনাকী উড়িয়ে
	  	জয়ধ্বনি দিয়ে উঠল যেন কারা।
রবীন্দ্রসদনে তিরিশজন কবি তিরিশদিন ধরে আউড়ে গেল
		একমুঠো জোনাকীর সঙ্গে তাদের ভাব-ভালোবাসা।
ইউনেসকোর গোল টেবিল ঘিরে বসে গেছে মহামান্যদের সভা
		একমুঠো জোনাকীর আলোয়
আফ্রিকা থেকে আসমুদ্র হিমাচল সমস্ত হোগলা বন আর ফাটা দেয়ালে
		সাজিয়ে দেবে কোনারক কিংবা এথেন্সের ভাস্কর্য।
সাত শতাব্দীর অন্ধকার এইভাবে
ফাঁকা মাঠে ম্যাজি দেখিয়ে চলেছে একমুঠো জোনাকীর আলোয়।


বুকের মধ্যে বাহান্নটা আলমারি

	   	(from হে সময় অশ্বারোহী হও he samay asvArohI hao 1979) p.110

বুকের মধ্যে বাহান্নটা মেহগনি কাঠের আলমারি।
আমার যা কিছু প্রিয় জিনিস, সব সেইখানে।
সেই সব হাসি, যা আকাশময় সোনালী ডানার ওড়াউড়ি
সেই সব চোখ, যার নীল জলে কেবল ডুবে মরবার ঢেউ
সেই সব স্পর্শ, যা সুইচ টিপলে আলোর জ্বলে ওঠার মতো
সব ঐ আলমারির ভিতরে।

যে সব মেঘ গভীর রাতের দিকে যেতে যেতে ঝরে পড়েছে বনে
তাদের শোক,
যে সব বন পাখির উল্লাসে উড়তে গিয়ে ছারখার হয়েছে কুঠারে কুঠারে
তাদের কান্না,
যে সব পাখি ভুল করে বসন্তের গান গেয়েছে বর্ষার বিকেলে
তাদের সর্বনাশ
সব ঐ আলমারির ভিতরে।
নিজের এবং অসংখ্য নরনারীর নীল ছায়া এবং কালো রক্তপাত
নিজের এবং চেনা যুবক-যুবতীদের ময়লা রুমাল আর বাতিল পাসপোর্ট
নিজের এবং সমকালের সমস্ত ভাঙা ফুলদানির টুকরো
সব ঐ বাহান্নটা আলমারির অন্ধকার খুপরীর থাকে-থাকে, খাঁজে-খাঁজে
বুকের মধ্যে।



হালুম : পূর্ণেন্দু পত্রী

	   	(from হে সময় অশ্বারোহী হও he samay asvArohI hao 1979) p.112

মাথায় মুকুটটা পরিয়ে দিতেই রাজা হয়ে গেলেন তিনি।
আর সিংহাসনে পাছা রেখেই হাঁক পাড়লেন
হালুম।
অমনি মন্ত্রীরা ছুটলো ঘুরঘুট্টি বনে হরিণের মাংস সেকতে
সেনাপতিরা ছুটলো খলখলে সমুদ্রে ফিস-ফ্রাইয়ের খোঁজে
কোতোয়ালরা ছুটলো হাটে-বাজারে যেখান থেকে যা আনা যায় উপড়ে
বরকন্দাজেরা ক্ষেত খামার ল্ড ভণ্ড করে বানালো ফ্রুটল্যলাড।
রাজা সরলেন ব্রেক ফাস্ট।
তারপরেই সিং-দুয়ারে বেজে উঠলো সাত-মণ সোনার ঘন্টা।
এবার রাজদরবার।
আসমুদ্র-হিমাচরের ন্যাংটো, আধ-ন্যাংটো জন্তু-জানোয়ারের ঝাঁক
পিলপিলিয়ে জড়ো হল রাজ-চত্বরে।
মন্ত্রী জানালো, প্রভু!
জনতা হাজির। ওরা প্রসাদ পেতে চায় আপনার অমৃত ভাষণের।
অমনি উত্তরে, দক্ষিণে, পুবে, পশ্চিমে, ঈশানে, নৈঋতে,
গাছে, পাতায়, শিশিরে, শ্মশানে, ধুলোয়, ধোয়ায়, কুয়াশায়
আকাশে, বাতাসে, হাড়ে, মাসে, পেটে, পাঁজরে
গর্জন করে উঠলো, সাড়ে সাতমো অ্যামপ্লিফায়ার
-হালুম।


হে সময়, অশ্বারোহী হও (he samay asvArohI hao) : পুর্নেন্দু পত্রী

	   	(from হে সময় অশ্বারোহী হও he samay asvArohI hao 1979) p.117

বিরক্ত নদীর মতো ভুরু কুঁচকে বসে আছে আমাদের কাল।
যাচ্ছি যাব, যাচ্ছি যাব এই গড়িমসি করে চূড়ো ভাঙা চাকা ভাঙা রথ
যে রকম ঘাড় গুজে ধুলোয় কাতর, সে রকমই শুয়ে বসে আছে।
খেয়াঘাটে পারাপার ভুলে-যাওয়া, নৌকার মতন, সময় এখন।

মনে হয় সময়ের পায়ে ফুটে গেছে দীর্ঘ পেরেক বা মনসার কাঁটা
ছিড়ে গেছে স্ম্যান্ডেলের স্ট্র্যাপ কিংবা জুতোর গোড়ালি
মনে হয় তার সব কোটপ্যান্ট ধোবার ভাটিতে
হয়তো বা কোনও এক লেকা্যাল ট্রেনের হু হু ভিড়ে
চুরি হয়ে গেছে পার্স, পার্সে ছিল অগ্রিম টিকিট।

প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে নিয়ে যাবে পাহাড়ের সোনালী চূড়োয়
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে আকাশের সিথি থেকে সিদুরের টিপ এনে দেবে
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে নক্ষত্রের ক্যামেরায় ছবি তুলে উপহার দেবে অ্যলবাম
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে কলকাতায় এন দেবে শঙ্খের সাগর।

প্রতিশ্রুতি যত্রতত্র ছড়াবার ছিটোবার কথ, থুতু, মলমুত্র নয়
প্রতিশ্রুতি লাল নীল পতাকার ব্যতিব্যস্ত ওড়াউড়ি নয়
প্রতিশ্রুতি প্রেসনোট, দৈববাণী, দেয়ারের লিপিচিত্র নয়।
প্রতিশ্রুতি শীতের চাদর
প্রতিশ্রুতি ভাঙা চালে খড়
প্রতিশ্রুতি সাদা ভাত, ভাতে দুধ, দুধে ঘন সর
প্রতিশ্রুতি চেতনার স্তরে স্তরে সপ্তসিন্ধুজলের মর্মর।

হে সময়, হে বিকলাঙ্গ বিভ্রান্ত সময়
কানা কুকুরের মতো এটো-কাটা ঘাঁটাঘাঁটি ভুলে
পৃথিবীর আয়নায় মুখ রেখে জামা জুতো পরে
সূর্যের বল্লম হাতে, একবার অশ্বারোহী হও।


সেই গল্পটা (sei galpaTA) : পূর্ণেন্দু পত্রী

 		(from আমাদের তুমুল হই-হল্লা AmAder tumul hai-hallA 1980) p.119

আমার সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি।
শোনো।
পাহাড়টা, আগেই বলেছি
ভালোবেসেছিলো মেঘকে
আর মেঘ কি ভাবে শুকনো খটখটে পাহাড়টাকে
বানিয়ে তুলেছিল ছাব্বিশ বছরের ছোকরা
সে তো আগেই শুনেছো।

সেদিন ছিলো পাহাড়টার জন্মদিন।
পাহাড় মেঘকে বললে
– আজ তুমি লাল শাড়ি পরে আসবে।
মেঘ পাহাড়কে বললে
– আজ তোমাকে স্নান করিয়ে দেবো চন্দন জলে।

ভালোবাসলে নারীরা হয়ে যায় নরম নদী
পুরুষেরা জ্বলন্ত কাঠ।
সেইভাবেই মেঘ ছিল পাহাড়ের আলিঙ্গনের আগুনে
পাহাড় ছিলো মেঘের ঢেউ-জলে।
হঠাৎ,
আকাশ জুড়ে বেজে উঠলো ঝড়ের জগঝম্প
ঝাঁকড়া চুল উড়িয়ে ছিনতাই এর ভঙ্গিতে ছুটে এল
এক ঝাঁক হাওয়া
মেঘের আঁচলে টান মেরে বললে
– ওঠ্‌ ছুঁড়ি! তোর বিয়ে ।

এখনো শেষ হয়নি গল্পটা।
বজ্রের সঙ্গে মেঘের বিয়েটা হয়ে গেলো ঠিকই
কিন্তু পাহাড়কে সে কোনোদিন ভুলতে পারলনা।
বিশ্বাস না হয় তো চিরে দেখতে পারো
পাহাড়টার হাড়-পাঁজর,
ভিতরে থৈথৈ করছে
শত ঝর্ণার জল।





বসন্তকালেই : পূর্ণেন্দু পত্রী

 		(from প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ priya pAThak-pAThikA-gaN 1980) p.142

শুনেছি বসন্তকালে বনভূমি অহঙ্কারী হয়।
অথচ আমার সব সোনাদানা চুরি হয়ে গেছে এই বসন্তকালেই।
বসন্তকালেই সেই কপোতাক্ষী রমণীর কুষ্ঠ হয়েছিল
যে আমাকে বলেছিল তার সব নদী,গিরি,অরণ্যের আমি অধীশ্বর।
খুদ-কুঁড়ো খুঁটে খাওয়া গরীবের ছিটেবেড়ো থেকে
তোমাদের মোজাইক বাগান পার্টিতে এসে ফলার খাওয়ার
সর্নিবন্ধ অনুরোধ এসেছিল বসন্তকালেই।

বসন্তকালেই আমি প্রধান অতিথি হয়ে পুরুলিয়া গেছি
বসন্তকালেই আমি ভুবনেশ্বর গিয়ে কবিতা পড়েছি
বসন্তকালেই আমি আকাশের ছেঁড়া জামা সেলাই করেছি।
অথচ আমার সব সোনাদানা,জমি-জমা,কাপড়-চোপড়
স্মৃতি দিয়ে মাজা-ঘষা গোপনতা,অমর পরাগ
এবং বেসরকারী অস্ত্রাগার থেকে লুঠ গোলা ও বারুদ
ভিজে,ভেঙে,গলে,পচে,খসে,ঝরে,নষ্ট হচ্ছে
বসন্তকালেই।



স্বপ্নগুলি হ্যাঙ্গারে রয়েছে : পূর্ণেন্দু পত্রী

 		(from প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ priya pAThak-pAThikA-gaN  1980) p.158

মুহুর্তের সার্থকতা মানুষের কাছে আজ
বড় বেশী প্রিয়।
জীবনের স্থাপত্যের উচ্চতা ও অভিপ্রায়মালা
ছেঁটে ছোট করে দিতে
চতুর্দিকে উগ্র হয়ে রয়েছে সেলুন।
মানুষের ভাঙা-চোরা ভুরুর উপরে
চাঁদের ফালির মতো
আজ কোন স্থির আলো নেই।
ছাতার দোকানে ছাতা যেরকম ঝোলে
সেইভাবে মানুষের রক্ত ও চন্দনমাখা স্বপ্নগুলি
হ্যাঙ্গারে রয়েছে।


কেরোসিনে,কখনো ক্রন্দনে : পূর্ণেন্দু পত্রী

 		(from প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ priya pAThak-pAThikA-gaN  1980) p.159

জ্যোতির্ময় বিছানা তোমার
তুমি বৃক্ষে শুকাও চাদর
তোমার বালিশ থেকে তুলো
উড়ে আসে আশ্বিনে-অঘ্রাণে।

পশমের লেপ ও তোশক
মসৃণতা ভালোবাসো তুমি
আমাদের নখে বড় ধুলো
মাংসাসীর হাড়-কাঁটা দাঁতে।

তুমি সূর্য ঘোরাও আঙুলে
নক্ষত্র-শাওয়ারে করো স্নান
আমাদের হ্যারিকেন জ্বলে
কেরোসিনে,কখনো ক্রন্দনে।


আগুনের কাছে আগে : পূ্র্ণেন্দু পত্রী

 		(from প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ priya pAThak-pAThikA-gaN 1980) p.161

হৃদয়ের কাছে আমি আগে কত গোলাপ চেয়েছি
এখন পাঁউরুটি চাই,সিমেন্টের পারমিট চাই।
সেই রমণীর কাছে আগে কত ভূ-স্বর্গ চেয়েছি
এখন দেশলাই চাই,হাতপাখা,জেলুসিল চাই।

আগুনের কাছে আগে মানুষেরা নতজানু ছিল
মানুষের সর্বোত্তম প্রার্থনার বিস্তীর্নতা ছিল;
আমাকে এমন জামা দাও তুমি,এমন পতাকা
হীরের আংটির মতো মূল্যবান এবং মহান।
আগুনের কাছে এসে এখন মানুষের করজোড়ে
ভোট চায়,কমিটির ডানলোপিলো-আঁটা গদি চায়
মহিষাসুরের নীল খড়গ চায়,অথবা পিস্তল।

মানুষ মেঘের কাছে আগে কত কবিতা চেয়েছে
এখন পেট্রোল চায়,প্রমোশন,পাসপোর্ট চায়।





links: * olpokotha 53 poems by Patri * কবিতার ঘরবাড়ী poemhouse 13 poems * dead link: banglalibrary : 18 pages of poetry * banglapoems 3 poems * http://bengalisurrealism.wordpress.com/category/purnendu-patri-পূর্ণেন্দু-পত্রী/ 3 poems

to contribute some excerpts from your favourite book to book excerptise. send us a plain text file with page-numbered extracts from your favourite book. You can preface your extracts with a short review.
email to (bookexcerptise [at] gmail [dot] com).

We reply to all feedback!



bookexcerptise is maintained by a small group of editors. get in touch with us! bookexcerptise [at] gmail [dot] .com.

This article last updated on : 2014 Oct 24