book excerptise:   a book unexamined is wasting trees

sunIl gangopAdhyAyer shreShTa kabitA

sunIl gangopAdhyAy

gangopAdhyAy, sunIl;

sunIl gangopAdhyAyer shreShTa kabitA [Srestha kabita]

De's Publishing, Kolkata, 1978 / 1997 (10th edn)

ISBN 8170791715, 9788170791713

topics: |  poetry | bengali

Excerpts

অপমান এবং নীরাকে উত্তর p.30

			apamAn ebang nIrAke uttar

সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কেন হেসে উঠলে, সাক্ষী রইলো বন্ধু তিনজন
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কেন হেসে উঠলে, সাক্ষী রইলো বন্ধু তিনজন
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কেন হেসে উঠলে, নীরা, কেন হেসে উঠলে, কেন
সহসা ঘুমের মধ্যে যেন বজ্রপাত, যেন সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে, নীরা, হেসে উঠলে, সাক্ষী রইলো বন্ধু তিনজন
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কেন হেসে কেন সাক্ষী কেন বন্ধু কেন তিনজন কেন?
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কেন হেসে উঠলে সাক্ষী রইলো বন্ধু তিনজন!

একবার হাত ছুঁয়েছি সাত কি এগারো মাস পরে ঐ হাত
কিছু কৃশ, ঠাণ্ডা বা গরম নয়, অতীতের চেয়ে অলৌকিক
হাসির শব্দের মতো রক্তস্রোত, অত্যন্ত আপন ঐ হাত
সিগারেট না-থাকলে আমি দু’হাতে জড়িয়ে ঘ্রাণ নিতুম
মুখ বা চুলের নয়, ঐ হাত ছুঁয়ে আমি সব বুঝি, আমি
দুনিয়ার সব ডাক্তারের চেয়ে বড়, আমি হাত ছুঁয়ে দূরে
ভ্রমর পেয়েছি শব্দে, প্রতিধ্বনি ফুলের শূন্যতা–

ফুলের? না ফসলের? বারান্দার নিচে ট্রেন সিটি মারে,
                                     যেন ইয়ার্কির
টিকিট হয়েছে কেনা, আবার বিদেশে যাবো সমুদ্রে বা নদী . . .
                                         আবার বিদেশে,
ট্রেনের জানালায় বসে ঐ হাত রুমাল ওড়াবে।
রাস্তায় এলুম আর শীত নেই, নিশ্বাস শরীরহীন, দ্রুত
ট্যাক্সি ছুটে যায় স্বর্গে, হো-হো অট্টহাস ভাসে ম্যাজিক-নিশীথে
মাথায় একছিটে নেই বাষ্প, চোখে চমৎকার আধো-জাগা ঘুম,
ঘুম! মনে পড়ে ঘুম, তুমি, ঘুম তুমি, ঘুম, সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কেন ঘুম
ঘুমোবার আগে তুমি স্নান করো? নীরা তুমি, স্বপ্নে যেন এরকম ছিল . . .

কিংবা গান? বাথরুমে আয়না খুব সাঙ্ঘাতিক স্মৃতির মতন,
মনে পড়ে বস স্টপে? স্বপ্নের ভিতরে স্বপ্নে–স্বপ্নে, বাস-স্টপে
কোনোদিন দেখা হয়নি, ও সব কবিতা! আজ যে রকম ঘোর
দুঃখ পাওয়া গেল, অথচ কোথায় দুঃখ, দুঃখের প্রভূত দুঃখ, আহা
মানুষকে ভূতের মতো দুঃখে ধরে, চৌরাস্তায় কোনো দুঃখ নেই, নীরা
বুকের সিন্দুক খুলে আমাকে কিছুটা দুঃখ বুকের সিন্দুক খুলে, যদি হাত ছুঁয়ে
পাওয়া যেত, হাত ছুঁয়ে, ধূসর খাতায় তবে আরেকটি কবিতা
কিংবা দুঃখ-না-থাকার-দুঃখ . . . । ভালোবাসা তার চেয়ে বড় নয়!


কেউ কথা রাখেনি পৃ ৬৪

			keu kathA rAkheni

কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল
                      শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু সেই বোষ্টুমী
                                               আর এলোনা
                      পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি।

মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর
                      তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো
                      সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর
                                                     খেলা করে!
নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো?  আমার মাথা এ ঘরের ছাদ
               ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায়
                                 তিন প্রহরের বিল দেখাবে?

একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনো
লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্করবাড়ির ছেলেরা
ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি
                                     ভিতরে রাস-উৎসব
অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ পরা ফর্সা রমণীরা
                      কত রকম আমোদে হেসেছে
                      আমার দিকে তারা ফিরেও চায়নি!
বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন, আমরাও . . .
বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই
সেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স, সেই রাস-উৎসব
                                        আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবেনা!

বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে
                      সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে!
ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠেয়ে প্রাণ নিয়েছি
দূরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীল পদ্ম
তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ
                                         এখনো সে যে-কোনো নারী।
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটল, কেউ কথা রাখে না!


নীরার হাসি ও অশ্রু পৃ.৭০

                       [আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি 1966]

নীরার চোখের জল অনেক চোখের অনেক
                                 নীচে
                                 টল্‌মল্‌
নীরার মুখের হাসি মুখের আড়াল থেকে
                                 বুক, বাহু, আঙুলে
                                       ছড়ায়
শাড়ির আঁচলে হাসি, ভিজে চুলে, হেলানো সন্ধ্যায় নীরা
                                 আমাকে বাড়িয়ে দেয়, হাস্যময় হাত
আমার হাতের মধ্যে চৌরাস্তায় খেলা করে নীরার কৌতুক
তার ছদ্মবেশ থেকে ভেসে আসে সামুদ্রিক ঘ্রাণ
সে আমার দিকে চায়, নীরার গোধূলি মাখা ঠোঁট থেকে
                      ঝরে পড়ে লীলা লোধ্র
আমি তাকে প্রচ্ছন্ন আদর করি, গুপ্ত চোখে বলি :
                      নীরা, তুমি শান্ত হও
অমন মোহিনী হাস্যে আমার বিভ্রম হয় না, আমি সব জানি
পৃথিবী তোলপাড় করা প্লাবনের শব্দ শুনে টের পাই
                      তোমার মুখের পাশে উষ্ণ হাওয়া
                      নীরা, তুমি শান্ত হও!

নীরার সহাস্য বুকে আঁচলের পাখিগুলি
                      খেলা করে
কোমর ও শ্রোণী থেকে স্রোত উঠে ঘুরে যায় এক পলক
সংসারের সারাৎসার ঝলমলিয়ে সে তার দাঁতের আলো
                     সায়াহ্নের দিকে তুলে ধরে
নাগকেশরের মতো ওষ্ঠাধরে আঙুল ঠেকিয়ে বলে,
                                 চুপ!
                                 আমি জানি
নীরার চোখের জল চোখের অনেক নিচে টল্‌মল্‌।।
   

link: see other poems from আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি at banglalibrary



যদি নির্বাসন দাও পৃ. ৮৯


যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো
      আমি বিষপান করে মরে যাবো ।
বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ
      নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ
      প্রান্তরে দিগন্ত নির্নিমেষ-
      এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূম
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো
      আমি বিষপান করে মরে যাবো ।

ধানক্ষেতে চাপ চাপ রক্ত
      এইখানে ঝরেছিল মানুষের ঘাম
এখনো স্নানের আগে কেউ কেউ করে থাকে নদীকে প্রণাম
এখনো নদীর বুকে
    মোচার খোলায় ঘুরে
         লুঠেরা, ফেরারী ।
শহরে বন্দরে এত অগ্নি-বৃষ্টি
      বৃষ্টিতে চিক্কণ তবু এক একটি অপরূপ ভোর,
বাজারে ক্রুরতা, গ্রামে রণহিংসা
      বাতাবি লেবুর গাছে জোনাকির ঝিকমিক খেলা
বিশাল প্রাসাদে বসে কাপুরুষতার মেলা
         বুলেট ও বিস্ফোরণ
         শঠ তঞ্চকের এত ছদ্মবেশ
      রাত্রির শিশিরে তবু কাঁপে ঘাস ফুল--               
        এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো ।

কুয়াশার মধ্যে এক শিশু যায় ভোরের ইস্কুলে
নিথর দীঘির পারে বসে আছে বক
আমি কি ভুলেছি সব
      স্মৃতি, তুমি এত প্রতারক ?
আমি কি দেখিনি কোন মন্থর বিকেলে
      শিমুল তুলার ওড়াওড়ি ?
মোষের ঘাড়ের মতো পরিশ্রমী মানুষের পাশে
      শিউলি ফুলের মতো বালিকার হাসি
নিইনি কি খেজুর রসের ঘ্রাণ
শুনিনি কি দুপুরে চিলের
      তীক্ষ্ণ স্বর ?
বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ...
      এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো
      আমি বিষপান করে মরে যাবো... ।
               (online at jolshaghor)



--কবির মৃত্যু : লোরকা স্মরণে 
(সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)

দু’জন খসখসে সবুজ উর্দিপরা সিপাহী
      কবিকে নিয়ে গেল টানতে টানতে
কবি প্রশ্ন করলেন : আমার হাতে শিকল বেঁধেছ কেন?
      সিপাহী দু’জন উত্তর দিল না;
      সিপাহী দু’জনেরই জিভ কাটা।
অস্পষ্ট গোধুলি আলোয় তাদের পায়ে ভারী বুটের শব্দ
তাদের মুখে কঠোর বিষণ্নতা
তাদের চোখে বিজ্ঞাপনের আলোর লাল আভা।

মেটে রঙের রাস্তা চলে গেছে পুকুরের পাড় দিয়ে
      ফ্লোরেসেন্ট বাঁশঝাড় ঘুরে-
      ফসল কাটা মাঠে এখন
      সদ্যকৃত বধ্যভূমি।
সেখানে আরও চারজন সিপাহী রাইফেল হাতে প্রস্তুত
তাদের ঘিরে হাজার হাজার নারী ও পুরুষ
কেউ এসেছে বহু দূরের অড়হর ক্ষেত থেকে পায়ে হেঁটে
কেউ এসেছে পাটকলে ছুটির বাঁশি আগে বাজিয়ে
কেউ এসেছে ঘড়ির দোকানে ঝাঁপ ফেলে
কেউ এসেছে ক্যামেরায় নতুন ফিল্‌ম ভরে
কেউ এসেছে অন্ধের লাঠি ছুঁয়ে ছুঁয়ে
জননী শিশুকে বাড়িতে রেখে আসেননি
যুবক এনেছে তার যুবতীকে
বৃদ্ধ ধরে আছে বৃদ্ধতরর কাঁধ
      সবাই এসেছে একজন কবির
              হত্যাদৃশ্য
              প্রত্যক্ষ করতে।

খুঁটির সঙ্গে বাঁধা হলো কবিকে,
      তিনি দেখতে লাগলেন
তাঁর ডান হাতের আঙুলগুলো-
কনিষ্ঠায় একটি তিল, অনামিকা অলঙ্কারহীন
মধ্যমায় ঈষৎ টনটনে ব্যথা, তর্জনী সঙ্কেতময়
বৃদ্ধাঙ্গুলি বীভৎস, বিকৃত-
কবি সামান্য হাসলেন,
একজন সিপাহীকে বললেন, আঙুলে
      রক্ত জমে যাচ্ছে হে,
      হাতের শিকল খুলে দাও!
সহস্র জনতার চিৎকারে সিপাহীর কান
      সেই মুহূর্তে বধির হয়ে গেল।

জনতার মধ্য থেকে একজন বৈজ্ঞানিক বললেন একজন কসাইকে,
      পৃথিবীতে মানুষ যত বাড়ছে, ততই মুর্গী কমে যাচ্ছে।
একজন আদার ব্যাপারী জাহাজ মার্কা বিড়ি ধরিয়ে বললেন,
      কাঁচা লঙ্কাতেও আজকাল তেমন ঝাল নেই!
একজন সংশয়বাদী উচ্চারণ করলেন আপন মনে,
      বাপের জন্মেও এক সঙ্গে এত বেজম্মা দেখিনি, শালা!
পরাজিত এম এল এ বললেন একজন ব্যায়ামবীরকে,
      কুঁচকিতে বড় আমবাত হচ্ছে হে আজকাল!
একজন ভিখিরি খুচরো পয়সা ভাঙিযে দেয়
              বাদামওয়ালাকে
একজন পকেটমারের হাত অকস্মাৎ অবশ হয়ে যায়
একজন ঘাটোয়াল বন্যার চিন্তায় আকুল হয়ে পড়ে
একজন প্রধানা শিক্ষয়িত্রী তাঁর ছাত্রীদের জানালেন
      প্লেটো বলেছিলেন...
একজন ছাত্র একটি লম্বা লোককে বললো,
      মাথাটা পকেটে পুরুন দাদা!
এক নারী অপর নারীকে বললো,
      এখানে একটা গ্যালারি বানিয়ে দিলে পারতো…
একজন চাষী একজন জনমজুরকে পরামর্শ দেয়,
      বৌটার মুখে ফোলিডল ঢেলে দিতে পারো না?
একজন মানুষ আর একজন মানুষকে বলে,
      রক্তপাত ছাড়া পৃথিবী উর্বর হবে না।
তবু একজন যেন সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো, এ তো ভুল লোককে
      এনেছে। ভুল মানুষ, ভুল মানুষ।

রক্ত গোধূলির পশ্চিমে জ্যোৎস্না, দক্ষিণে মেঘ
বাঁশবনে ডেকে উঠলো বিপন্ন শেয়াল
নারীর অভিমানের মতন পাতলা ছায়া ভাসে
              পুকুরের জলে
ঝমঝুমির মতন একটা বকুল গাছের কয়েকশো পাখির ডাক
কবি তাঁর হাতের আঙুল থেকে চোখ তুলে তাকালেন,
              জনতার কেন্দ্রবিন্দুতে
রেখা ও অক্ষর থেকে রক্তমাংসের সমাহার
      তাঁকে নিয়ে গেল অরণ্যের দিকে
ছেলেবেলার বাতাবি লেবু গাছের সঙ্গে মিশে গেল
      হেমন্ত দিনের শেষ আলো
তিনি দেখলেন সেতুর নিচে ঘনায়মান অন্ধকারে
              একগুচ্ছ জোনাকি
দমকা হাওয়ায় এলোমেলো হলো চুল, তিনি বুঝতে পারলেন
      সমুদ্র থেকে আসছে বৃষ্টিময় মেঘ
তিনি বৃষ্টির জন্য চোখ তুলে আবার
      দেখতে পেলেন অরণ্য
      অরণের প্রতিটি বৃক্ষির স্বাধীনতা-
গাব গাছ বেয়ে মন্থরভাবে নেমে এলো একটি তক্ষক
      ঠিক ঘড়ির মতন সে সত বার ডাকলো :

গঙ্গে সঙ্গে ছয় রিপুর মতন ছ’জন
              বোবা কালা সিপাহী
              উঁচিয়ে ধরলো রাইফেল-
যেন মাঝখানে রয়েছে একজন ছেলেধরা
      এমন ভাবে জনতা ক্রুদ্ধস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো
      ইনকিলাব জিন্দাবাদ!
কবির স্বতঃপ্রবৃত্ত ঠোঁট নড়ে উঠলো
তিনি অস্ফুট হৃষ্টতায় বললেন :
              বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক!
              মানুষের মুক্তি আসুক!
              আমার শিকল খুলে দাও!
কবি অত মানুষের মুখের দিকে চেয়ে খুঁজলেন একটি মানুষ
নারীদের মুখের দিকে চেয়ে খুঁজলেন একটি নারী
      তিনি দু’জনকেই পেয়ে গেলেন
কবি আবার তাদের উদ্দেশ্যে মনে মনে বললেন,
      বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক! মিলিত মানুষ ও
      প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব বিপ্লব!

প্রথম গুলিটি তাঁর কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল-
              যেমন যায়,
কবি নিঃশব্দে হাসলেন
দ্বিতীয় গুলিতেই তাঁর বুক ফুটো হয়ে গেল
কবি তবু অপরাজিতের মতন হাসলেন হা-হা শব্দে
তৃতীয় গুলি ভেদ করে গেল তাঁর কন্ঠ
কবি শান্ত ভাবে বললেন,
              আমি মরবো না!
মিথ্যে কথা, কবিরা সব সময় সত্যদ্রষ্টা হয় না।
চতুর্থ গুলিতে বিদীর্ণ হয়ে গেল তাঁর কপাল
পঞ্চম গুলিতে মড় মড় করে উঠলো কাঠের খুঁটি
ষষ্ঠ গুলিতে কবির বুকের ওপর রাখা ডান হাত
              ছিন্নভিন্ন হয়ে উড়ে গেল

কবি হুমড়ি খেয়ে পড়তে লাগলেন মাটিতে
জনতা ছুটে এলো কবির রক্ত গায়ে মাথায় মাখতে-
কবি কোনো উল্লাস-ধ্বনি বা হাহাকার কিছুই শুনতে পেলেন না
কবির রক্ত ঘিলু মজ্জা মাটিতে ছিট্‌কে পড়া মাত্রই
      আকাশ থেকে বৃষ্টি নামলো দারুণ তোড়ে
শেষে নিশ্বাস পড়ার আগে কবির ঠোঁট একবার
      নড়ে উঠলো কি উঠলো না
      কেউ সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করেনি।

আসলে, কবির শেষ মুহূর্তটি মোটামুটি আনন্দেই কাটলো
মাটিতে পড়ে থাকা ছিন্ন হাতের দিকে তাকিয়ে তিনি বলতে চাইলেন,
      বলেছিলুম কিনা, আমার হাত শিকলে বাঁধা থাকবে না!


স্বর্গের কাছে প.১৪৪


কত দূর বেড়াতে গেলুম, আর একটু দূরেই ছিল স্বর্গ
      দু'মিনিটের জন্য দেখা হলো না
হঠাত্‌ ট্রেন হুইশ্‌ল দেয়
খুচরো পয়সার জন্য ছোটাছুটি
         রিটার্ন টিকিটে একটি সই
            আমি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি!
এত কাছে, হাতছানি দেয় স্বর্গের মিনার,
              ঘ্রাণ আসে পারিজাতের
           ছুটে গিয়ে একবার দেখে আসবো না?
   শরীর উদ্যত হয়েছিল, সেই মুহূর্তে চলন্ত ট্রেন
              আমায় লুফে নেয়
পাপের সঙ্গীরা হা-হা-হা-হা করে হাসে
দেখা হলো না, আমার সর্বাঙ্গে এই শব্দ
              অস্তিত্বকে অভিমানী করে
আমি স্বর্গ থেকে দূরে সরে যাই!


heaven, so near

how close it was, how close -
      from where we'd gone
         - just a little ahead
    lay heaven; missed it
by just two minutes
   suddenly the train's whistle,
     tickets to be purchased
    run around for small change
          stationmaster's signature
            on the return ticket half

helplessly i looked
   there, just beyond those trees
     the towers of heaven
     from
the platform you could smell
        the pArijAt flowers
     maybe there was time
         to just run along once
but then the moving train
plucked me from flight
	"ho ho ho ho" they laughed
my partners in sin,
     deep in the interstices of my soul
  their laughter echoes
even as i move further and further off
     from my heaven
		[transl. amit mukerjee apr 09]



নীরা তুমি কালের মন্দিরে p.221

[ বাতাসে কিসের ডাক শোনো 1987]

চাঁদের নীলাভ রং, ওইখানে লেগে আছে নীরার বিষাদ
ও এমন কিছু নয়, ফুঁ দিলেই চাঁদ উড়ে যাবে
যে রকম সমুদ্রের মৌসুমিতা, যে রকম
         প্রবাসের চিঠি
অরণ্যের এক প্রান্তে হাত রেখে নীরা কাকে বিদায় জানালো
আঁচলে বৃষ্টির শব্দ, ভুরুর বিভঙ্গে লতা পাতা
ও যে বহুদূর,
পীত অন্ধকারে ডোবে হরিৎ প্রান্তর
ওখানে কী করে যাবো, কী করে নীরাকে
        খুঁজে পাবো?

অক্ষরবৃত্তের মধ্যে তুমি থাকো, তোমাকে মানায়
মন্দাক্রান্তা, মুক্ত ছন্দ, এমনকি চাও শ্বাসাঘাত
দিতে পারি, অনেক সহজ
কলমের যে-টুকু পরিধি তুমি তাও তুচ্ছ করে
যদি যাও, নীরা, তুমি কালের মন্দিরে
ঘন্টধ্বনি হয়ে খেলা করো, তুমি সহাস্য নদীর
জলের সবুজে মিশে থাকো, সে যে দূরত্বের চেয়ে বহুদূর
তোমার নাভির কাছে জাদুদণ্ড, এ কেমন খেলা
জাদুকরী, জাদুকরী, এখন আমাকে নিয়ে কোন রঙ্গ
       নিয়ে এলি চোখ-বাঁধা গোলকের ধাঁধায়!

সাঁকোটা দুলছে পৃ২২৬


মনে পড়ে সেই সুপুরি গাছের সারি
...

এপারে ওপারে ঢিল ছুঁড়ে ডাকাডাকি্
ওদিকের গ্রামে রোদ্দুর কিছু বেশি
ছায়া ঠোঁটে নিয়ে উড়ে যায় ক'টি পাখি
ভরা নৌকায় গান গায় ভিন দেশি ।

সাঁকোটির কথা মনে আছে, আনোয়ার?
এত কিছু গেল, সাঁকোটি এখনো আছে
এপার ওপার স্মৃতিময় একাকার
সাঁকোটা দুলছে, এই আমি তোর কাছে!

মিথ্যে, মিথ্যে, মিথ্যে... ২২২

প্ল্যাটফর্মে নেমে পায়চারি করতে করতে দু'হাত ছড়িয়ে আড়মোড়া ভাঙতেই...


amitabha mukerjee (mukerjee [at-symbol] gmail) 2013 Jun 05